গাড়িটা কয়েক বার বিকট আর্তনাদ করে থেমে গেল।
আবার তাই হল। হ্যাঁ, সম্পূর্ণ গিয়ার ফ্রি। গাড়ি তো নিউট্রাল আছে। তাহলে এমন হচ্ছে কেন? বুঝতে পারছে না ঝুম্পা। সে চাবিটা খুলে পুনরায় স্টার্ট করল। ডান পা দিয়ে এক্সসেলেটর লিভারে হালকা চাপ দিল। গাড়িটি কঁকিয়ে উঠল। সেই শব্দের মধ্যে বৃদ্ধ কন্ঠস্বর। ঘড় ঘড়ে গলা। যেন বহু রোগভোগের পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কি হল বুঝতে পারল না। ৮৩ A রুটের এই গাড়িটা সব থেকে বয়স্ক। সামনে চোখের ঘোলাটে কাঁচের মধ্যে কত স্মৃতি রয়ে গেছে। ঝুম্পা এই গাড়ির ড্রাইভার। আঠারো বছর চার মাসের মেয়েটি এ রুটের সব থেকে প্রাচীন গাড়িটির চালক। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের ছিপছিপে চেহারা। ওড়না হীন সালোয়ার কামিজের মধ্যে থাকা অনমনীয় শারীরিক ভাষা অদম্য। পরিপাটি করে বাঁধা চুলের ওপর হাত দিল সে। অনেক কিছু মাথায় রেখে গাড়ি চালাতে হয়। বেখেয়াল হলেই সর্বনাশ। কত কত মানুষের প্রাণ তাঁর হাতে। ফিরে চেষ্টা করল। সে মিটার বোর্ডের দিকে তাকাল। ইঞ্জিনের টেম্পারেচার ও ফুয়েলের ইন্ডিকেটর সব স্বাভাবিক। কেন এমন হচ্ছে। বুঝতে পারছে না। মাঝে মধ্যে এই সমস্যা হয়। মালিক সব জানে, তবু এই গাড়ি রাস্তায় রেখেছেন। যতই সমস্যা হোক না কেন, তাঁকে অবসর দিতে রাজী নয়। এই গাড়িটি তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। কয়েক দশক খেটে মালিককে কোটিপতি করেছে এই বৃদ্ধ ঘোড়া। একেবারে লক্ষ্মী গাড়ি। মালিক গণপতিবাবুর এখন রুটের গাড়ি সাতটি আর ট্রাভেল বাস দুইটি। তাই এ গাড়িকে সম্মান করেন। দেবীর চোখে দেখেন। লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়। তবু তাঁকে সমাদর করেন।
বাস স্ট্যান্ডের সব থেকে সিনিয়র গাড়িটি চালাত দুলাল। দুলাল মন্ডল, বয়স আটচল্লিশ বা ঊনপঞ্চাশ হবে। সে গাড়িটি খুব যত্ন করত। নিজ়ের অপত্য স্নেহে ভালোবাসত। তাই মালিক তাঁর লক্ষ্মীকে দুলাল ছাড়া অন্য কোনো ড্রাইভারের হাতে দেন নি। কিন্তু দুলালের একটা এক্সিডেন্টে পা ভেঙে যায়। প্রায় তিন মাস বিছানায়। গাড়িটাও বন্ধ । দুলাল সুস্থ হলে গাড়ি রাস্তায় নামবে; গণপতিবাবু সাফ জানিয়েছিল।
দুলাল সুস্থ হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে দুটোর বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। পা যন্ত্রণা হয়। কি করবে বুঝতে পারে না। যদি ছেলে থাকত তাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে সঙ্গে নিত। কিন্তু দুলালের দুই মেয়ে। ছোটটি দশ বছরের। তাই সে বড় মেয়ে ঝুম্পাকে হাতে ধরে সব শিখিয়েছে। এখন মেয়েরা সব করছে। মহাকাশে যাচ্ছে। আর সামান্য গাড়ি চালাতে পারবে না। ঝুম্পা সব কিছু শিখে নিয়েছে , কিছু দিনের মধ্যে। বাবার কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না। যখন সে খাবার দিতে যেত , তখন শুনতো বাবার পায়ে অসহ্য যন্ত্রণার কথা। সে নিজে তাই বাবাকে বলেছিল গাড়ি চালানো শিখবে। তাঁকে হেল্প করবে। প্রথমে সম্মত না হলেও পরে তা করেছিল। সমস্যা হয়েছিল গণপতি বাবুর দিক থেকে। তিনি মটেই রাজী হবেন না। মেয়ে হয়ে স্টিয়ারিংধরবে! নিজের লক্ষ্মীকে ছেড়ে দিতে হবে মেয়ের হাতে। তা আবার হয় নাকি। অসম্ভব …! কিন্তু দুলাল বলে, সে গাড়িতে সব সময় থাকবে। দু ট্রিপ নিজে চালাবে। বাকি দু ট্রিপ মেয়ে চালাবে, ও ব্যাক সিটে বসে থাকবে। মালিক দুলালকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। রাজী হয়ে যান। আর তখন থেকে ঝুম্পার জীবন চলমান। পুরুষের একাধিপত্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এগিয়ে চলেছে। কোমল হাতে কঠিন স্টিয়ারিং। হুশ হুশ করে এগিয়ে যাচ্ছে। কাদা অনেক ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে। স্ট্যান্ডের অন্য গাড়ির চালকের তীর্যক মন্তব্য হজম করতে হয়েছে। এখন আর সেই সব কথায় কান দেয় না বাপ – বেটি।
ঝুম্পা বুঝতে পারল কোনো বড় প্রবলেম হচ্ছে। না হলে গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না কেন? ওঁর বাবাকে ডাকল । দুলাল তখন মিল খাচ্ছিল। টাইম হয়ে গেছে। গাড়ি ছাড়তে হবে। সে দুলালকে বলে, বাবা; কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না? তাড়াতাড়ি এসো।
“ব্রেক আনলক করে দেখ্” - হাত ধুতে ধুতে দুলাল বলল।
“গাড়ি স্টার্টই নিচ্ছে না তো, আবার …”
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি। কি হল দেখছি।”
“হ্যাঁ এসো … ’
গাড়িতে বসে ছিল কয়েক জন মহিলা। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে। প্রতি কথার মধ্যে শ্লেষ ঝরছে। মেয়ে মানুষকে আবার গাড়ি চালাতে দিয়েছে। যেন ছেলে খেলা …! দুর্ঘটনায় পড়লে কি হবে তখন।
এমন সময় দুলাল এল। ওঁর কানে কথা গুলো গেল। তবু কিছু না বলে পাইলট দরজা থেকে গাড়িতে উঠল। ডান পা এক্সসেলেটরে দিয়ে চাবি ঘোরাতেই গাড়ি শব্দ করছে। স্টার্ট হয়ে গেছে। ওঁর হাতের স্পর্শ গাড়ি খুব চেনে। সামান্য টাচে গাড়ির অনেক শক্তি তৈরি হয়েছে। সে উঠে গেল। ঝুম্পা ড্রাইভারের সিটে বসল। বাম পা দিয়ে ক্লাস বেশি করে চেপে ধরল। গিয়ার লিভারটি এক নাম্বারে দিল। হাত দুটি দিয়ে শক্ত করে ধরল স্টিয়ারিং। সে নিজের মনকে এক জায়গায় জোরো করে ডান পায়ে এক্সসেলেটর হালকা চাপ দিল। গাড়ি গর্জন করছে। আরো জোরে …। এবার বাম পা এর নিচে থাকা ক্লাস লিভারটি আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকল। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি তার ভাঙাচোরা দেহ নিয়ে রওনা দিল। তারই শব্দে, বসে থাকা প্যাসেঞ্জার গুলোর সমালোচনা কানে আর ধরা দিল না। চুপ হয়ে গেছে । ধীরে ধীরে গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফলতা বাস স্ট্যান্ড একাবারে হুগলি নদীর বুকের ওপর। বেশ কিছু দোকান নদীর কোলে আশ্রয় নিয়েছে। পাশে নরম দূর্বা ঘাসে ঢাকা ফুটবল খেলার মাঠ। অদূরে দেখা যায় জন ড্রেক এর পুরানো কেল্লা। বাংলার নবাব সিরাজ যখন কলকাতা আক্রমণ করেন, তখন ব্রিটিশদের কিছু বণিক এখানে চলে এসেছিলেন। কেল্লা সুরক্ষিত রাখার জন্য চার পাশে পরিখা কাটা। ৮৩ A বাস স্ট্যান্ড ওদের প্রতিবেশী। আর আত্মীয় রয়েছে কিছুটা উত্তরে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। মহান বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর সাধনার মহল। প্রতি দিন নদীর ভিজিয়ে দেওয়া তরঙ্গ স্নান করিয়ে দেয় এই মন্দিরের পশ্চিম অঙ্গ।
ঝুম্পা বদর তলায় গাড়ি থামাল। এই রুটের সব গাড়ি বদর সাহেবকে প্রণাম করে । সে ও করল। একটি বিশাল জরাগ্রস্ত তেঁতুল গাছের নিচে সিমেন্টের বদর সাহেবের থান। থানটি কেন্দ্র করে চল্লিশ ফুট ব্যাস নিয়ে চারপাশে তেঁতুল গাছের ডাল পালা আচ্ছাদিত চাঁদোয়া। এই থানের মাহাত্ম্য অনেক। বাবার থানে মেলাও হয়। রফিক চাচা তা পৌরহিত্য করেন। এক সপ্তাহ ধরে হিন্দু মুসলিম মিলিত হয় এই উৎসবে। পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, গাজন হয়। আশে পাশের চার পাঁচটি গ্রাম ভিড় করে । কত কত দোকান। বাসের কন্ডাক্টর গাড়ি থেকে নেমে পাঁচ টাকার একটা কয়েন দিয়ে ভক্তি ভাবে প্রণাম করল। এবার গাড়ি নিশ্চিন্তে এগোবে। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সর্পিল পথ বেড় মেরে গাড়ির গতি বাড়ল। সে চপ্পল পরা ডান পা এক্সেলেটর থেকে সরিয়ে নিল, সঙ্গে সঙ্গে বাঁ পা দিয়ে ক্লাস চেপে ধরল। নিজের প্রতি খুব আত্মবিশ্বাসী সে। দমে যাবার পাত্র নয়। হাত দিয়ে গিয়ার লিভারটি দ্বিতীয় গিয়ারে দিল। হাত পা সমান ভাবে কাজ করে এই টুকু মেয়ের। দুলাল মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়। তার দক্ষতা দেখে নিজের যত কষ্ট আছে, সব ভুলে যায়। বাচ্ছা মেয়েটির শারীরিক ভাষা এতটা পরিণত যে সকলের কপাল কুঁচকে যায়। ঝুম্পা আবার এক্সেলেটর চেপে ধরল; চোখে দৃঢ় প্রত্যয় লেপ্টে রয়েছে। ক্লাজ ছেড়ে দিল। গাড়ি ভালই গতি পেল। এবার সকলে খুশি। ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে। সে স্টিয়ারিং প্রয়োজন মতো ঘোরাচ্ছে। প্রয়োজনে হর্ন দিচ্ছে।
হেল্পার দরজার কাছে ঝুলে আছে। হাঁক দিচ্ছে ‘ফতেপুর, আমতলা, বেহালা, বাবুঘাট …। … ফাঁকা ফাঁকা …। চলে আসুন, চলে আসুন।’
সত্যি আজ গাড়ি ফাঁকা। কেন যে এমন হল কি জানি। কন্ডাক্টর চেঁচিয়ে বলে, - ‘ঝুম্পা একটু ধীরে। লোক হয়নি। সহরার হাটে দাঁড়াতে হবে। প্যাসেঞ্জার নেই। খালি সিট নিয়ে এগিয়ে গিয়ে লাভ নেই। আজ বাজার খুব খারাপ । যাসস্… শালা সব মাটি হবে দেখছি।’
‘চিন্তা করিস না মনা। সহরার হাটে ভর্তি হয়ে যাবে দেখবি। মিলিয়ে নিবি।’ ঝুম্পার ব্যাক সিটে থেকে ঝুকিয়ে মুখ বের করে দুলাল বলল।
‘হলে তো ভালোই হয়। তোমারটায় তো মার খেলুম। ফতেপুরে কিছু হয়ে ছিল। বাকি রাস্তায় টুকটাক। ঝুম্পার বেলায় কত হয় দেখা যাক্।’ কাঁধে ঝোলানো চামড়ার ব্যাগে থেকে টিকিট বের করতে করতে মনা বলল।
গতি কমিয়ে হর্নের সাথে একটা কালভার্ট পেরিয়ে গেল। দুর্বল গাড়ির দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বডির ঝনঝন শব্দ করে হাটে পৌঁছে গেল। অনেকে নামবে। দরজার কাছে এসেছে। হেল্পার হাতের কাছে দড়িতে টান দিল। ঘন্টা টং টং করে ওঠে। গাড়ি থেমে গেল। ইঞ্জিন বন্ধ। এখানে অনেক প্যাসেঞ্জার দাঁড়িয়ে। এত লোক অপেক্ষা করবে সে ভাবতে পারে নি। সহরারহাট থেকে ভাদুড়াগামী রাস্তায় মিনি বাস একটি বাচ্ছাকে বেটে দিয়েছে। তাই ঐ রাস্তা বন্ধ। সেই কারনে এত এত প্যাসেঞ্জার দাঁড়িয়ে। ঝুম্পা অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে। তাই সমস্যা নেই। গাড়ি সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গেল। অধিকাংশ দাঁড়িয়ে। দুলাল খুব খুশি হল। কালো ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে জরদার কষ লাগা দাঁত বের করে মনা তাকালো দুলালের দিকে। হাসি লেগে রয়েছে। হেল্পার গলা চড়িয়ে দিল, ‘ফতেপুর, আমতলা, বেহালা, বাবুঘাট …। ফাঁকা ফাঁকা …।’
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। প্রতি মোড় মাথার ভিড় ঠেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে। দোকান ফেলে, ফাঁকা মাঠ ফেলে, আবার কলরব ফেলে সামনের দিকে। তাঁর মধ্যে কোমলতার কোনো চিহ্ন নেই।
বুড়ো ঘোড়া হাঁসফাঁস করে রাস্তা ফেলে দৌড়াচ্ছে। পেটে ঠাসা ভিড়। দরজা থেকে ঝুলছে কেউ কেউ। লুকিং গ্লাসে ঝুম্পা দেখতে পাচ্ছে। খুব সাবধানে সে চালাচ্ছে। রোড বাম্পার বা স্প্রিড ব্রেকার দেখে চালাতে হচ্ছে। একটু ভুল হলে এক্সিডেন্ট হতে পারে। হরিণডাঙা এসে হাল্কা থামল। মনা টিকিট কাটছিল। খ্যাঁসখ্যাসে গলায় হেল্পারকে বলে , ‘কালো, … এ কালো; দরজা খালি কর। এই দিকে পাঠিয়ে দে …। এই মোড় থেকে অনেকে উঠবে। পাঠা … পাঠা। ও দাদা, ও দাদা এদিকে আসুন। এদিকে …।’
কালো বুঝিয়ে সুঝিয়ে, কিছুটা ঠেলে গাড়ির ভিতরে করে দিল। দরজা এখন ফাঁকা। কিন্তু প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে গন্ডোগোল শুরু হয়ে গেল। চাপাচাপি অবস্থা। সব চিঁড়ে চাপটা হয়ে যাচ্ছে। কুলকুল করে ঘাম বেরচ্ছে। সেই গন্ধে সারা গাড়ি ভরে গেছে। মনা টিকিট কাটছে, দাঁড়িয়ে থাকা প্যাসেঞ্জারদের বলছে কোন কোন সিট ফাঁকা হবে। দূরের যাত্রীদের সেখানে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। সদ্য শিকার খাওয়া পেট মোটা অজগরের মতো ৮৩ A রুটের বাসটি গড়াচ্ছে। ঝুম্পা কোনো দিকে কান দেয় না। এগিয়ে চলেছে। চোখ সামনে কিংবা লুকিং গ্লাসে। কান ঘন্টার প্রতি, কখন কালো দাঁড়াতে বলবে। মানুষ নামবে, কিংবা উঠবে।
হঠাৎ চড়া গলা সে শুনতে পেল। কিছু কিছু যাত্রী হৈ চৈ করছে। ভ্যাপসা গরমে ভয়ঙ্কর অবস্থা হল। চড়া গলা মহিলার। পিছনের দিক থেকে আসছে। সুর আরো চড়ছে। হাতা হাতি পর্যায়ে। মনা থামাতে পারছে না। দুলাল উঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। সে ঝুম্পাকে বলে, ‘তুই এগিয়ে যা। আমি দেখি কি হল।’ কিন্তু ঠেলাঠেলি দেখে সে গেল না। তিল ধরবে না, এমনই অবস্থা। মহিলা উত্তেজিত হয়ে পাশে দাঁড়ানো মাঝ বয়সী এক ব্যক্তিকে বার দুই চড় কষিয়ে দিল। সেই ব্যক্তি নাকি কনুই মেরেছে। মনা থামাতে গেল। পারল না। মহিলা আরো গরম হয়ে গেল, ফর্সা সাদা গালপাটি লাল হয়ে গেছে। টেকসই দেহটি ভিজে লাস্যময়ী রৃপ উন্মুক্ত হয়েছে। মহিলা অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন স্বরে বলেন , ‘আমি পুলিশে দেব। হারামজাদা …। ভিড় বাসে মেয়ে পেলেই, হাত মারা এদের মতো লোকের স্বভাব। পুলিশে দিলে তবেই শিক্ষা হবে। হারামজাদা …।’
লোকটি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সকলে তাঁর দিকে তাকিয়ে। মহিলা আবারো শুরু করল, ‘প্রথম থেকে লক্ষ্য করছি, গাড়ি থামলে উঁনি গায়ের ওপর ঢলে পড়ছে। ভাবলাম ব্রেক মারার জন্য হায়তো নিজে ভারসাম্য রাখতে না পেরে গায়ে হেলে পড়ছে। কিন্তু না, উল্টে পড়ছে আর কনুই দিয়ে পাশ থেকে বুকে চাপ দিচ্ছে। হারামজাদা …। বাড়িতে মা – বোন নেই নাকি।’
কয়েক জন চেঁচিয়ে ওঠে। মার শালা কে; মার …। তিন – চারটি হাত উদ্দ্যত হয় মারার জন্য। মনা ঝামেলা বুঝে, গালাগালি দিয়ে ধাক্কা মেরে দরজার কাছে নিয়ে যায়। ঝুম্পাকে থামাতে বলে, গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় ব্যক্তিটিকে ।
মনা গড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে, ‘শালা বয়স তো ভালোই হয়েছে, এই বয়সে স্বভাব আর গেল না।’
দরজার কাছে কালো ঝুলছিল। সে মুখটাকে ধনুকের মতো করে ফিসফিস করে বলে, ‘শালা বুড়ো ভাম; কিন্তু আলুর দোষ গেল না …। শালা …’
ঝুম্পা ওর বাবাকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। সে পিছনের দিকে না তাকিয়ে বলে, ‘কিসের জন্য এত গন্ডগোল হল।’
দুলাল ইতঃস্তত করে লুকিং গ্লাসে তাকায়। তারপর সে বলে , “ও কিছু না রে মা। তুই মন দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যা…। একটা বেয়াড়া লোক বদ আচরণ করছিল। তাই তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।”
ঝুম্পা গাড়ির হর্ন দিতে দিতে মাথা নাড়ে। গাড়ি দিঘিরপাড় থেকে সতেরোটা ছোট বাম্পার পেরিয়ে দস্তিপুর পৌঁছলো। মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তায় এত গুলো স্পিড ব্রেকার। বুড়ো গাড়িটি উত্তাল সমুদ্রের মাঝে অসহায় জাহাজের মতো পাল্টি খেতে খেতে এগিয়ে গেল। দূর্বল কবজা গুলো তীব্র চিৎকার করছে । মনে হচ্ছে হাড়গুলো এক্ষুনি খুলে যাবে।
ঝনঝন শব্দ করে একশো সতেরো নাম্বার জাতীয় সড়কে উঠে পড়ে। ডায়মন্ডহারবার জাতীয় সড়ক খুব ব্যস্ত একটা রাস্তা। সব গাড়ি এই রাস্তায় দৌড়ায় না; সব গুলো যেন উড়ে বেড়ায়। কানের পাশ থেকে হুশ হুশ শব্দ শোনা যায়। ঝুম্পা গিয়ার পরিবর্তন করল। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল। লুকিং গ্লাসে সে চোখ ফেলতে দেখতে পায়, উলটো দিক থেকে বুলেট গতিতে আসছে অন্য রুটের ঝাঁ – চক্চকে লাক্সারি। সে জানে এই গাড়ি যদি ওদের আগে যায়; তাহলে ৮৩ A গাড়ি আর কোনো যাত্রী পাবে না। এমনিতেই কঙ্কালসার বডি, আর গতির হেরফের হলে কেউ পা মাড়াবে না। ঝুম্পা সব বোঝে। বৃদ্ধ ঘোড়া ভয়ঙ্কর ভাবে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে। কালো কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। তারপর সুপার ফার্স্ট গাড়ির মতো ভোঁ ভোঁ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। পরের স্টপেজ়ে রাস্তার মাঝখানে এমন আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়ায় ; যাতে অন্য গাড়ি ওর গাড়িকে ওভারটেক করতে না পারে।
লাক্সারি বাস থেকে কিছু গালাগালি ছুঁড়ে দিল। মনে হয় ড্রাইভার বলল। ঝুম্পা শুনেও কানে করল না। দুলাল বলে, ‘মা রে তুই গাড়িটা ছেড়ে দে …’
কিন্তু ঝুম্পা দমবে না। কারন আগের দিন ঐ গাড়িটি এমনই ব্যবহার করে ছিল। সে একদম ছাড়বে না। পিছনের গাড়ি কান ফাটা হর্ন দিচ্ছে। রাস্তা ছেড়ে দেবার জন্য। শিরাকোলের আগে মল্লারঠেস অপেক্ষাকৃত কম ভিড় থাকে। তাই সে নিশ্চিন্তে গতি বাড়াতে থাকে। মল্লারঠেস ফেলে বেরিয়ে যাবার সময় হঠাৎ একটা আট বছর বয়সী ছেলে খালি গায়ে রাস্তার পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দৌড়ে যায়। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ঝুম্পার মাথা কাজ করছে না। দুলাল বিস্ফারিত চোখে তাকায়; কিছু বলার মতো সময় নেই। একে বারে কাছাকাছি।
মুহূর্তে মাথা নিশ্চল হয়ে গেছে। ঝুম্পার অটল চোখ তাকিয়ে আছে। কিন্তু পা সর্বক্ষণ ব্যস্ত। অজান্তে এক্সলেটর থেকে পা সরে গেল। বাম পা সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস চেপে ধরে। ডান পা পরক্ষণে ব্রেকে ধীরে ধীরে চাপ দিতে থাকে। এত দ্রুততার সাথে সবটা হল; সে নিজেও বুঝতে পারল না। গাড়িটা সামনে ঝুঁকে গেল। গাদা গাদি ভিড়ে এর ওর গায়ে হুমড়ে পড়ে যায়। অপলক সব ঘটে গেল । দুলাল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাত্রীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ রেগে গিয়ে অকথ্য কথা শুরু করল। ঝুম্পার কান সোঁ সোঁ করছে। তার কানে কিছু এল না।
আমতলায় পেট খালি হল। কিন্তু সব সিট বুক হয়ে গেছে। দরজার কাছে কালো দাঁড়িয়ে হাঁকছে, ‘এই …খালি খালি। এ… খালি খালি।’
মনা একটা দশ টাকার নোট দিয়ে কালোকে বলে পাশের দোকানে পান কিনে আনার জন্য। সে দৌড়ে যায়। রাস্তার ফুটপাত দখল করে থাকা পান দোকানে গিয়ে বিনা খয়ের শিব এনে মনার হাতে দেয়। এখানে গাড়ি ভীষণ মন্থর। প্রায় পনেরো মিনিট তো লাগবেই। চামড়ার ব্যাগের খুচরো পয়সা ঝন্ঝনিয়ে মনা বলে, ‘কালো গাড়ি থেকে নেমে হাঁক দে …। সব খালি । হেঁকে হেঁকে বল।’
কালো হাতছানি দিয়ে ডাকার মতো করে হাঁক দেয়, ‘’ এ … সিট খালি। সিট খালি। তাড়াতাড়ি …। খালি… খালি। ‘’
ওদের গাড়ি যখন সিগন্যালের কাছে পৌঁছলো । তখন আলো লাল হয়ে গেল। আবার দেরি করতে হবে। কালো ওর স্বভাব ভঙ্গিতে হেঁকে যাচ্ছে , ‘বেহালা, মোমিনপুর, বাবুঘাট …। খালি খালি …।’
সবুজ হতেই গাড়ি বেরিয়ে গেল। এক হাত ছাড়া গাড়ি আর মানুষের ভিড় মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। ঝুম্পা স্টিয়ারিং এক হাতে ধরে ছিল। সে দু’ হাতে আটকে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বেরিয়ে গেল।
সে দেখিয়ে দিতে চায় মেয়েরা পঙ্কিল নয়। পুরুষের কিছু ভুল ধারণা সমাজের মধ্যে বেদ বাক্য হিসাবে ব্যবহার করে। নিজেদের পেশি শক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করে। তা যে কত ভুল; সেটা সে দেখাবে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। কিন্তু এই রোগগ্রস্ত সমাজ মানবে কি? জানতে চাইবে কি? অনেক প্রশ্ন ...। উত্তর দিতে কেউ পারে না। পারবেও না। বুকে হাত দিয়ে কথা বলতে সমাজ যে ভয় পায়।
বাবুঘাট সে পৌঁছে গেল। নির্দিষ্ট টাইম টেবিলের থেকে পাঁচ মিনিট বেশি লাগল। কেন লাগল। গাড়ির গতি মন্দ ছিল না তো। নাহ্, দেরি তো হবে। মাঝের হাটের ভাঙা ব্রিজের কাছে সময় নষ্ট হয়ে ছিল। সে তার টাইম ক্যালকুলেশন ঠিকই করেছে। কোথায় কত সময় লেট করতে হবে সব পারফেক্ট হয়েছে। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে নিল। কেউ তো আর মেয়ে বলে বেশি পাত্তা দেয় না। দুলাল এক মাত্র উৎসাহ দেয়। আর বাকিরা ওর গাড়িতে গেলেও মুখের বক্রতা এখনো থেকে গেছে। শিক্ষিত সচেতন মানুষ হলে অনেকে ওর সুনাম করে। বয়সের অনুপাতে অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়েছে সে। এই কথা ভেবেই অধিকাংশ মানুষ অবাক হয়।
কলকাতার এক জনপ্রিয় মিডিয়া ওর সাথে দেখা করে। ঝুম্পাকে নিয়ে তাঁরা একটা স্টোরি করবে ইচ্ছা প্রকাশ করে। সে এই সব বিষয় নিয়ে কোনো ভাবেই ভাবিত নয়। খাটলে খাওয়া, আর না খাটলে অভুক্ত হয়ে থাকতে হবে।
পড়াশুনা করতে পারল না সে। মাঝ পথে সব ছেড়ে দিতে হয়। নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ সে। মাধ্যমিকের স্বপ্ন গুলো যখন মনের মধ্যে বেড়ে উঠছিল। তখন তার বাবার এক্সিডেন্ট হয়। একটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে ছিল তারা । সেই সময়টা মা অনেক কষ্ট করে ছিল। সবাই বলত দুলাল ; যদি ঝুম্পার বয়সী তোর একটা ছেলে থাকত কতই ভালো হত। এই অসময়ে কত কত সাহায্য পেতে পারতিস। ঝুম্পা সব শুনতো। কিছু বলত না।
প্রথম থেকে সে ডাকাত মেয়ে ছিল। ভয় কাকে বলে সে জানতো না। গ্রামের বয়স্ক পাকা মাথা গুলো গান্ধিবুড়ি বলে খ্যাপাত তাকে । এই নামে ডাকার একটা ইতিহাস আছে। পাড়া হোক বা স্কুলে সব জায়গায় একটু বেশি সাহস দেখাত। ভুল কিছু চোখে পড়লে গর্জে উঠত সে। সে বার পাশের গাঁয়ের একটি ছেলে এক স্কুল ছাত্রীকে হাত ধরে টান ছিল। রাস্তায় তা দেখে সে ক্ষেপে ওঠে, ছেলেটার নাকে এক ঘুঁষি মেরে ফাটিয়ে দেয়। যদিও মেয়েটি ছেলেটাকে ভালোবাসত। মেয়েটার বাড়ির সবাই মেনে নিয়ে ছিল। কিন্তু ঝুম্পা মেয়েটাকে অসহায় মনে করে তা করে ছিল।
বাবুঘাট থেকে গাড়ি ছাড়বে সন্ধ্যা ছয়টা পনেরো মিনিটে। ফিরতে রাত হবে। দিনের প্রায় সবটা সময় দেয় গলন্ত পিচ ঢালা রাস্তায়। মানুষের দাপাদাপি; গাড়ির ভিড় সব অতিক্রম করে জীবন এগিয়ে নিয়ে যায় সে। মাথার মধ্যে সব সময় টাইম টেবিল কাজ করে। একটু টাইমের গড়বড় হলে খিস্তি দু – একটা তো জুটেই যায়।
এমনিতে ৮৩ A রুট অনেক পুরানো। বাস গুলো পুরানো ইঞ্জিনের ওপর নতুন চিকন বডি পরিয়ে ঝকঝকে হয়ে আছে। মাঝে মধ্যে গাড়ি গুলো বিকল হয়ে যাওয়া হৃদযন্ত্রের মতো হাঁসফাঁস করে। তাই এই গাড়ি এড়িয়ে যায় মানুষজন। সবার মধ্যে ব্যস্ততা রয়েছে। আর যদি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পরে; তাহলে তো এই সচল জীবনে পিছিয়ে পড়বে। তাই আগে ভাগে পাবলিক এই সব বাস থেকে দূরে থাকে। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে ফলতার সাথে কলকাতার যোগাযোগের এক মাত্র অবলম্বন ছিল এই বুড়ো হাঁস। তখন জোয়ান বয়স। তাই বাস গুলো হুশ হুশ করে চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যেত। ভিড় হত খুব।
এই ফলতা থেকে বহুকাল আগে ট্রেন চলত। আদ্যিকালের কথা, ঊনিশশো সতেরো সালের দিকে। ন্যারো গেজ রেল লাইন। ম্যাকলয়েড লাইট রেলওয়ে কোম্পানি চালাত ফলতা থেকে কালীঘাট পর্যন্ত । সকলে মায়ের পূজো দিতে যেত এই ট্রেনে করে। মাঝেরহাট পর্যন্ত যেত, তারপর নেমে যেতে হত। তারপর পায়ে হেঁটে মায়ের থানে যেত সকলে। তার অনেক পরে এই বাস। কিন্তু এখনকার উন্নত টেকনোলজির সাথে লড়াই করে টিকিয়ে রেখেছে নিজেদের অস্তিত্ব।
ঝুম্পার সময় হয়ে গেছে। ছ’টা দশ। গাড়িতে ওঠার আগে প্রণাম করে নেয়। তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয়। পাঁচ মিনিট শব্দ করতে থাকে। মাঝে মাঝে কালো – সাদা ধোঁয়া বের হয় । সন্ধ্যায় ভিড় কম না। সারা দিনে এ শহরে যারা শ্রম দেয়, তাদের ক্লান্ত ঘাম শুকতে শুকতে ছেঁড়া সিটে শরীর হেলিয়ে দেয়। এই সময়ে ওদের গাড়িতে যারা যাত্রী হয় সবাই সকলকে চেনে। যতই রাত হোক না কেন এই বাসের জন্য অপেক্ষা করে ওরা। কারণ হয়তো অন্য বাসের থেকে ভাড়া কম।
বাবুঘাট থেকে বাস কয়েকটা হর্ন দিয়ে বেরিয়ে গেল। সারা শহরে আলোর রোশনাই ভরে গেছে। দূরে রবীন্দ্র সেতুর অপরৃপ দৃশ্য চোখ থেকে সরতে থাকে। প্রিন্সের ঘাটের পাশ থেকে হুগলী সেতুর লাইট চোখ ঝলসে যাচ্ছে। গাড়ি কিন্তু কোনো দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভাষা ভাষা আলোর মধ্যে থেকে অনেক কথা বেরিয়ে আসছে। অটল গতিতে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে।
আবার সেই একই জায়গা গুলো ছেড়ে ওদের মফ্সল এলাকার দিকে গড়াচ্ছে চাকা। মনা কাঁধের ব্যাগ থেকে টিকিট নিয়ে আঙুল দিয়ে কয়েকটা ঘর্ষণ দিয়ে শব্দ করে । তারপর টিকিট কাটতে থাকে। সে বলে – দাদা টিকিট দেখি, টিকিট। কালো আর হাঁকছে না। দরজার কাছে চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। ঝুম্পার ঘড়িতে চোখ পড়ে, আট’টা চল্লিশ। সে গতি বাড়াতে থাকে। সুপারফাস্ট গতিতে চলছে। অনেকে সিটে থেকে বলছে, - এতো উড়ছে রে। সুপার ফাস্ট।
গতির সাথে সাথে পনেরো মিনিট হতে না হতে জোরসে শব্দ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় আবার কি হল। গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। দুলালের চোখে ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম লেগে ছিল কিছুক্ষণ। সামান্য হৈ – হট্টগোলে চোখ খুলে তাকায়। সে বলে – ‘কি হল রে ঝুম্পা। স্টার্ট বন্ধ হল কি করে।
- বুঝতে পারছি না, এমন হল কেন।
- এই রাতে তো কোনো দোকান খোলা নেই। আবার এই ফাঁকা জায়গায় …
- মনে হয় ঠেলতে হবে।
- হম্, দেখি ঠেলে। মনা … আরে এ কালো গাড়ি ঠেলতে হবে। কয়েক জনকে নিয়ে পিছনে একটু ঠেলার ব্যবস্থা কর।
কালো গাড়ির পিছন থেকে উত্তর দেয় - প্রথমেই বুঝতে পেরেছি, ঠেলতে হবে। তাই আমি পিছনে চলে এসেছি। মনাদা কয়েক জন লোক নিয়ে পিছনে এসো।
মনা টিকিট কাটা বন্ধ করে কয়েক জন যাত্রীকে অনুরোধ করে ঠেলার জন্য। কয়েক জন ঠ্যাংড়া হৈ – হৈ করে নিচে নেমে যায়। ঠেলতে থাকে। ঝুম্পা গাড়ি স্টার্ট দেয়। না হচ্ছে না। সবাই চিৎকার করে কাঠের গোড়ে ঠেলার মতো গান ধরে ঠেলে। গাড়ি কঁকিয়ে ওঠে। স্টার্ট হয়ে যায়। সবাই উঠে পড়ে।
রামনগর, দক্ষিন চব্বিশ পরগনা